বাংলা সাহিত্যের সম্পদ হয়েও মূল স্রোতোধারা থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন সিলেটী নাগরী লিপিতে রচিত সাহিত্য। বাংলা ভাষা-সাহিত্যের এই ঐশ্বর্য নিকট অতীতেও সাধারণে ছিল অজ্ঞাত, অনাবিষ্কৃত। খুব অল্প মানুষই জানে, বাংলা হরফে বাংলা সাহিত্য চর্চার সমান্তরালে একদা সিলেটী নাগরী হরফেও বাংলা সাহিত্য চর্চা হতো। কালপরিসরে প্রায় ছয় শ বছর বৃহত্তর সিলেট এবং তার ভৌগোলিক সীমারেখার সংলগ্ন অঞ্চলে। ঢাকার অদূরে গাজীপুর থেকে ত্রিপুরা, আসামের শিলচর থেকে নেত্রকোনা জেলায় এই লিপির সাহিত্য আদৃত হয়েছিল। কয়েক বছর আগে ভৈরবের এক সাবেক সংসদ সদস্য, তার এলাকার এক মাজার থেকে সংগ্রহ করে একটি পাণ্ডুলিপি আমার কাছে নিয়ে এসেছিলেন। হাতে লেখা এ পুথিটি নাগরী লিপিতে রচিত। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা বিষয়ক এক পাণ্ডুলিপি ছিল এটি। একটা সময় জনে জনে, ঘরে ঘরে আশ্রয় পেয়েছিল এই লিপিতে রচিত পুঁথি। মুদ্রণের যুগ শুরু হলে, ১৮৭০ সালে এর ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয় সিলেটের বন্দর বাজারে। বিলেত ফেরত মুনশি আবদুল করিম তাঁর ‘ইসলামিয়া প্রেসে’ নাগরী লিপির পুঁথি-পুস্তক মুদ্রণের উদ্যোগ নেন। মুনশি নিজেও কয়েকটি কাহিনি কাব্য রচনা করেছেন এই নাগরী লিপিতে। নাগরী লিপি জনপ্রিয়তার শীর্ষে যখন পৌঁছেছে, তখন সিলেটে দুটো, কলকাতায় দুটো, সুনামগঞ্জে একটি এবং শিলচরে একটি ছাপাখানা একযোগে নাগরী হরফের বইপত্র মুদ্রণের কাজটি করত। শত বছর আগেও ছিল নাগরীর সুবর্ণকাল।
নাগরী লিপির সাহিত্য জগতের সঙ্গে বাংলা সাহিত্যের মূলধারার পাঠক তো বটেই, সাহিত্য ইতিহাসবিদদের কাছেও ছিল অজ্ঞাত। বাংলা সাহিত্যের প্রথম ইতিহাস রচয়িতা গোপাল হালদার থেকে ড. শহীদুল্লাহসহ কারও সাহিত্যের ইতিহাস গ্রন্থেই এ গৌরবময় বিষয়টি আলোচিত হয়নি। ফলে, এ লিপির সাহিত্য রচয়িতাগণ ইতিহাসের অন্ধকারে নিপতিত। অন্য পক্ষে, নাগরী হরফে রচিত সাহিত্য পাঠোদ্ধারে সক্ষম নন বলে অনভ্যস্ত পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণে ব্যর্থ হয়েছে এই সাহিত্যকর্ম। মধ্যযুগে যোগাযোগ ছিল পশ্চাৎমুখী, ফলত এই লিপি ও সাহিত্য তার গণ্ডির বাইরের মানুষের সুহৃদ অভ্যর্থনা পায়নি। নাগরী সাহিত্য বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। সেন্টমার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের মূল মানচিত্র থেকে আলাদা বা বিচ্ছিন্ন হলেও তা বাংলাদেশই। তেমনি নাগরী হরফ, যা বাংলা ভাষা চর্চায় ব্যবহৃত; তার সাহায্যে যে সাহিত্য এবং জীবনচর্চা হয়েছে, তাও বাংলা ভাষার সাহিত্যসম্পদ। সেন্টমার্টিনের সঙ্গে ব্রিজ স্থাপিত হলে যেমন এই দ্বীপটি বাংলাদেশের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন থাকে না, তেমনি নাগরী লিপি ও সাহিত্যের সঙ্গে মূলধারায় বাংলা সাহিত্যের একটি সেতু তৈরি হলে, তা আলাদা থাকে না। এই যোগসূত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষে কাজ করে চলেছি ২০০৭ সাল থেকেই। এই আখ্যানের এক নব অধ্যায় সিলেটী নাগরী লিপির নিউইয়র্ক জয়।
বাংলা সাহিত্যে সিলেটী নাগরী হরফ চর্চা কীভাবে এবং কখন চালু হলো, তা বিস্তৃত পরিসর আলোচনার বিষয়। চতুর্দশ শতাব্দীতে বাংলা লিপির সমান্তরালে বাংলা বর্ণমালারই একটি সংক্ষিপ্ত, সংস্কারকৃত, অধিকতর গতিময় ৩২ বর্ণের একটি বর্ণমালা চালু হয় সিলেট অঞ্চলে। উদ্ভাবনের সঙ্গে জড়িতদের হদিস এখন আর কোনো গবেষকদের হাতে না থাকলেও নাগরী লিপি গবেষকদের প্রায় সকলেই অনুমিত, কোনো ক্ষেত্রে বাস্তব পরিস্থিতি বিচার-বিশ্লেষণে সিদ্ধান্ত, হজরত শাহজালালের সিলেট আগমনের পরবর্তীকালে তার অনুসারীদের হাতেই এ বর্ণমালা উদ্ভাবন। সিলেট অঞ্চলে এর উৎপত্তি বলেই সম্ভবত এর নামকরণ হয় দেবনাগরীর আদলে সিলেটী নাগরী লিপি। ফুল নাগরী এই লিপির অন্য আরেকটি নাম। কেউ কেউ একে মুসলমানি নাগরী নামেও অভিহিত করেছেন।
সিলেটী নাগরী লিপির সাহিত্যে বাংলা ভাষার সিলেটী উপভাষা আশ্রিত হয়েছে প্রায় শতভাগ। আরবি-ফারসি প্রভাবিত সিলেটের আঞ্চলিক ভাষা গ্রহণ করেছে বলে, সিলেট অঞ্চলের মানুষের দাবি, এটি তাদের ভাষার বর্ণমালা। এ কারণে সিলেটী নাগরী লিপি ও তার সাহিত্য ভান্ডারের প্রতি তাঁরা লালন করেন সুগভীর ভালোবাসা। হালে লুপ্ত এই ঐতিহ্যের নবজাগরণের একটি ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে, এবং এর পালে উৎসাহ উদ্যমের নতুন হাওয়া লেগেছে।
এ রকম এক উৎসবে নাগরী লিপি সাহিত্যের নিউইয়র্ক যাত্রা এবং তার রচিত হয়েছে জয়গাথা। ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর আমেরিকার নিউইয়র্কের বাঙালি অধ্যুষিত জ্যামাইকা শহরে ইয়র্ক কলেজ মাঠে ‘বিশ্ব সিলেট সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হলো। গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়া সিলেটী বাঙালিদের এক মহামিলনের স্বপ্নে আয়োজকেরা মার্কিন মুল্লুকে বিস্তার করেছিলেন তাদের কর্মপ্রয়াস। ইয়র্ক কলেজের সবুজ চত্বরে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে সূচিত এই উৎসব উদ্বোধন করেন বর্ণাঢ্য সিলেটী স্যার ফজলে হাসান আবেদ। দুই দিনব্যাপী এই উৎসবে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, বাংলাদেশ, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের সফল কয়েকজন সিলেটী মানুষ। বিজ্ঞানী আতাউল করিম যেমন উপস্থিত ছিলেন তেমনি লন্ডন থেকে যুক্ত হয়েছিলেন মটিভেশনাল স্পিকার তরুণ সাবিরুল হক। সম্মেলনে ইয়র্ক কলেজের মাঠে সমবেত হয়েছিলেন হাজার কয়েক মানুষ। তাদের মধ্যে দ্যুতি ছড়িয়েছেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত আলোকিত সফল মানুষেরা। সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্যই ছিল জন্মভূমি সিলেট বন্দনা। আয়োজকেরা দুই দিনের এই সম্মেলনকে তাই সাজিয়েছিলেন ‘সিলেট সত্তা’ খুঁজে নেবার কিংবা খোঁজ দেওয়ার পসরা নিয়ে। এই আয়োজনে একটি সেমিনার ছিল ‘সিলেট হেরিটেজ’। এ সেমিনারে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে ‘সিলেটী নাগরী লিপি’র গৌরবগাথা নিয়ে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রিত হয়ে যোগ দিয়েছিলাম এ সম্মেলনে।
এ সম্মেলনের আগের দিন ১৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয় দৈনিক প্রথম আলোর উত্তর আমেরিকা সংস্করণ। প্রতি সপ্তাহে শুক্রবারই এ পত্রিকাটি নিয়মিত ওই অঞ্চলের পাঠকের দোরগোড়ায় হাজির হয়। নিউইয়র্ক থেকে ২২টি সাপ্তাহিক কাগজ প্রকাশিত হয় বলে জেনেছি। অন্য সকল কাগজের মুখাবয়ব, ব্যবসায়িক চরিত্র এবং দৃষ্টিভঙ্গি প্রায় এক। কেবল ব্যতিক্রম প্রথম আলো। অন্য পত্রিকাগুলোর মুখশ্রী আমাকে তেমন আকর্ষণ করতে পারেনি। ওগুলো কমিউনিটি পত্রিকাই। কেবল প্রথম আলো কমিউনিটির জন্য প্রকাশিত হয় বাংলাদেশের পত্রিকা হয়ে। প্রথম আলো বিশ্ব সিলেট সম্মেলনকে প্রাধান্য দিয়ে প্রকাশ করেছে এই সংখ্যাটি। সিলেটের ইতিহাস ঐতিহ্য বিষয়ে গোটা দশেক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে এই সংখ্যায়। লিখেছেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, শাকুর মজিদসহ আরও অনেকে। এই সংখ্যায় ‘নাগরী লিপি: বাংলা ভাষার অনন্য সম্পদ’ শিরোনামে আমারও একটি লেখা মুদ্রিত হয়েছে।
পরদিন বিশ্ব সিলেট সম্মেলনের উদ্বোধনী দিবস। প্রবেশমুখেই নাগরী লিপিতে লেখা একাধিক ফেস্টুন। মাঠের চারপাশেই লাগানো ফেস্টুনে সিলেটের গৌরব পরিস্ফুট করার চেষ্টা। এগুলোতে শোভা পেয়েছিল এই নাগরী হরফের তৈরি নানা বৈচিত্র্য। মাঠের এক কোনায় রয়েছে ‘সিলেট ঐতিহ্য প্রদর্শনী’। সেখানে আগ্রহীরা নেড়েচেড়ে দেখছেন নাগরী লিপির বইপত্তর। রয়েছে ২৫টি গ্রন্থের নাগরী গ্রন্থসম্ভার (সম্পাদক: মো. আবদুল মান্নান ও মোস্তফা সেলিম)। একটু এগুলোই প্রথম আলোর স্টল। সেখানে ফ্রি বিতরণ করা হয়েছে তাদের চলতি সংখ্যা। যেখানে রয়েছে সিলেটী নাগরী লিপির ওপর পূর্ণ পৃষ্ঠা একটি নিবন্ধ। মূলমঞ্চে বিকেলে প্রদর্শিত হয় সরোয়ার তমিজ উদ্দিন পরিচালিত প্রামাণ্যচিত্র ‘সিলেটী নাগরী লিপির নবযাত্রা’। আমি অভিভূত। সিলেট উৎসব যেন নাগরী লিপিময়। এ সময়ের জন্য, এ দিনের স্বপ্নে আমি যাত্রা শুরু করেছিলাম ২০০৭ সালে প্রায় একা। ১০ বছর পর বিদেশবিভুঁইয়ে এমন উচ্ছ্বাস দেখে আবেগে আমার চোখ অশ্রুসজল হয়ে ওঠে।
পরদিন ১৭ সেপ্টেম্বর ইয়র্ক কলেজের একটি হলে বেলা ১২টায় শুরু হলো আমার নাগরী লিপি বিষয়ে সেমিনার, সিলেট হেরিটেজ। হলভর্তি শ্রোতা, প্রতিটি আসন পূর্ণ কানায় কানায়। শ্রোতার সংখ্যা প্রায় শতাধিক, এঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন একেকজন বোদ্ধা মানুষ। দিনের প্রথম সেশন ছিল এটি। দিনের অন্য সেশনের বক্তা, শ্রোতারাও এসে পড়েছেন ততক্ষণে। ফলত তারা সকলেই উদ্বোধনী সেশনের শ্রোতার আসনে। সমস্ত দুনিয়া থেকে আগত অতিথি সিলেটীদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন নিউইয়র্কের সংবাদপত্র, ইলেকট্রনিক মাধ্যমের সম্পাদকেরাও। উপস্থিত হয়েছিলেন নিউইয়র্কের বিশিষ্টজনেরা। এত গুণী মানুষকে কোনো সেমিনারে এক সঙ্গে পাওয়া বড়ই সুখের স্মৃতি। এই বিজ্ঞজনের সামনে আমি সিলেটী নাগরী লিপি ও সাহিত্য, তার গৌরবগাথা, লুপ্ত হয়ে যাওয়া এবং পুনরুজ্জীবনের ইতিবৃত্ত শোনালাম। খুব আগ্রহ নিয়ে শুনলেন শ্রোতারা। এই সেমিনারে শত মনীষার চিন্তা ভুবনে বিস্তার করা গেল বাংলা ভাষা সাহিত্যের এই অধ্যায়। এখানেই শেষ নয়।
কুইন্সের লেক সিয়রে ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে ‘শহীদ ডা. আব্দুন নূর ফাউন্ডেশন’ আয়োজন করে ‘সিলেটী নাগরী লিপির নবযাত্রা’ প্রামাণ্যচিত্রের প্রদর্শনী এবং মত বিনিময় অনুষ্ঠান। ডা. আব্দুন নূর মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা। একাত্তরে পাক হানাদারের হাতে তিনি নির্মমভাবে প্রাণ হারিয়েছেন। সংগঠনটির নিউইয়র্ক সমন্বয় কমিটি এই আয়োজন করে। দর্শকদের বড় অংশ ছিলেন নবপ্রজন্মের সিলেটী বাঙালি। প্রদর্শনীর মতবিনিময় পর্বে তারা আবেগঘন বক্তৃতা করেন। এর নবজাগরণে, নিউইয়র্কে বাঙালি সমাজে কাজের উৎসাহ প্রদর্শন করেন।
ওজন পার্কে ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে রোজ বেঙ্গল রেস্টুরেন্টে এ প্রামাণ্যচিত্রের তৃতীয় প্রদর্শনী ও মত বিনিময় অনুষ্ঠান হয়। আয়োজন করে শহীদ মনু মিয়া ফাউন্ডেশন। মনু মিয়া ছয় দফা আন্দোলনের প্রথম শহীদ। তার বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজারে। বিয়ানীবাজারের কয়েকজন মানুষ তার স্মৃতি রক্ষা এবং সমাজকল্যাণের লক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করেছেন শহীদ মনু মিয়া ফাউন্ডেশন। প্রদর্শনী স্থানের ধারণ ক্ষমতা পূর্ণটাই ছিল শ্রোতা ও দর্শকময়। এই প্রদর্শনীর মতবিনিময়ে প্রবীণরা স্মৃতি কাতর হয়ে ওঠে। তাদের শৈশব-কৈশোরে জ্যেষ্ঠদের এই পুথি পড়তে দেখেছেন তারা। তাদের নানা-নানি, দাদা-দাদির নাগরী লিপিতে রচিত হালতুন্নবী কিংবা জঙ্গনামা পুথি পাঠের স্মৃতির ঝাঁপি খোলেন, প্রজন্মের প্রতিনিধিরা তা হৃদয়ঙ্গম করেন।
শেষে অন্য একটি অনুষ্ঠানের প্রসঙ্গ, কমিউনিটি নেতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার রাজনীতিতে যুক্ত ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার আয়োজন করেন তিনজন সিলেটীকে নিয়ে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। ছিলেন সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিন, জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক দূত ড. এ কে আবদুল মোমেন, আমাকেও রেখেছিলেন আয়োজক কর্তৃপক্ষ। আলী বাবা কনভেনশন হলে সন্ধ্যায় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে আমি সবিস্তারে সিলেটী নাগরী লিপি ও সাহিত্যের ইতিহাস এবং তার নবজাগরণের কাহিনি শোনাই সুধীদের।
কমিউনিটি টিভি টিভিএন ২৪, টাইম টিভি প্রচার করে একাধিক প্রোগ্রাম। কয়েকটি পত্রিকা এ বিষয়ে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিশ্ব সিলেট সম্মেলন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ডা. জিয়াউদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, তারাও এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কাজ করবেন। আমার এই ভ্রমণ ছিল স্বল্প সময়ের। তারপরও দু’সপ্তাহের এই ভ্রমণের প্রতিদিন নিউইয়র্কে এ নিয়ে ছোটবড় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছি। আমেরিকাপ্রবাসী বাঙালিদের এই স্বতঃস্ফূর্ততা আমার কাছে ছিল অভাবিত। জীবনকে সাজাতে যারা প্রবাসী হয়েছেন, তারাও যে মর্মে দেশকে কত ভালোবাসেন, যতনে পোষেন প্রিয় দেশমাতৃকাকে, তা হয়তো আমার অজানা থেকেই যেত।
নাগরী লিপি সাহিত্যেও নিউইয়র্ক জয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল কয়েক বছর আগে। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ফরাসি নাগরিক ড. থিবো দু’বের গবেষণা কাজে ঢাকায় এলেন। তার আগ্রহ রয়েছে এই লিপির সাহিত্য নিয়ে। তার সঙ্গে একাধিক বৈঠক হলো আমার কার্যালয়ে। তাকে নিয়ে আমি ১৩ জুলাই ২০১১ তারিখে ঢাকায় আয়োজন করি ‘সিলেটী নাগরী সাহিত্য: নতুন দৃষ্টিতে দেখা’ অনুষ্ঠান। তিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের লাইব্রেরির জন্য সংগ্রহ করেন ২৫টি গ্রন্থের নাগরী গ্রন্থসম্ভার। তার হাত ধরে মার্কিন মুল্লুকে ঠাঁই পেয়েছিল বাংলা ভাষার তো বটেই পৃথিবী ভাষা লিপির অনন্য গৌরব একই ভাষার একাধিক লিপি এবং তার সাহায্যে রচিত সাহিত্য ভান্ডার। বাংলার নিভৃত কোণে যা ছিল অনাদৃত, তা মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়েছে বিদেশে বিভুঁইয়ে, সুদূর মার্কিন মুল্লুকে। সে যাত্রার পূর্ণতা দিল বিশ্ব সিলেট সম্মেলনের উপলক্ষ। এ অধ্যায়টি ছিল সিলেটী নাগরী লিপিতে রচিত সাহিত্য বাংলা সাহিত্যের মূলস্রোতে প্রবহমান করার আমাদের প্রচেষ্টার একটি সার্থক রূপায়ণ।
Leave a Reply